সৌদি আরব থাকি অনেক বছর, আল্লাহ যদি
আমাকে তৌফিক দিত তাহলে আমি আমার মাকে হজ্ব করাতে আনতাম, এমনটাই ইচ্ছা ছিল।
আল্লাহ আমাকে সেই তৌফিক দিয়েছেন, আমার মা যখন হজ্বের করার উদ্দেশ্যে
জেদ্দা বিমানবন্দরে এসে নামে, আমার অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দেখা করতে
পারলাম না। তাদের মধ্যে এক হাজী সাহেবের কাছে একটি সৌদি ফোন নাম্বার ছিল,
আমি ঐ হাজী সাহেবের মাধ্যমে মার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলাম। মা আমার ফোন
পেয়ে কেঁদে দিল, আমিও কান্না ধরে রাখতে পারিনি। মা বললো বাজান আমি ঠিক মতো
আইসা পৌছাইছি কোন সমস্যা হয় নাই তুমি
কোন চিন্তা করোনা। এখন অল্প কিছু সময় এর ভিতর আমাদের মদিনা শরীফ নিয়ে
যাবে। আমি মাকে বললাম কালকে আমি ছুটি নিয়ে মদিনা শরীফ আসতেছি। সকালে আবার
কথা বললাম মার সাথে, মা ওখানে আসতে পেরে অনেক খুশি বুঝতে পারলাম নবীজির
রওজা জেয়ারত এবং সব কিছু ঘুরিয়ে দেখিয়েছে তাদের হজ্ব কাফেলা। মাকে বললাম
মা আমি আজই ছুটি নিয়ে আসতেছি, আমার আসার কথা শুনে মা বললো এতদূর তোর আসতে
কস্ট হবে অনেক সময় লাগে জেদ্দা থেকে আসতে, মা জেদ্দা থেকে মদিনা গিয়েছে
অনেক সময় লাগে বুঝতে পেরেছেন। তাই তার সন্তানের কস্ট হবে মায়ের চিন্তা।
রাত্রে গাড়িতে উঠে মাকে ফোন দিলাম মা আমি আসতেছি। আমি যখন মদিনা শরীফ গিয়ে
পৌঁছলাম রাত তখন সারে তিনটার মতো বাজে। এত রাত্রে আর মার হোটেল খুঁজতে
গেলাম না। ভাবলাম ফজরের নামাজ পড়তে আসলে দেখা হবে। ফজরের আজানের পর পর ফোন
দিলাম, ঐ হাজী সাহেব আমাকে বললো তোমার মা নামাজ পড়তে আসছে নামাজ শেষে একটা
গেটের সামনে সামনে থাকতে বললো। কথা মতো ঐ গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
অনেক দিন পর আমি আমার মাকে দেখবো। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর মা বেরিয়ে
আসল, আমি আমার মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম মাও কেঁদেছে। মমতাময়ী
মায়ের মায়াবী মুখটা দেখে পরান ভরে গেল। মা আমাকে বলে কস্ট হইছেনা আসতে, মা
তার সন্তানের কথা ভাবে কস্ট হইছে কিনা আসতে, মা যে বাংলাদেশ থেকে এসেছে
তার মুখটা যে শুকিয়ে গেছে তার জন্য চিন্তা নেই। এক হাজী বললো তোমার মা
রাতে ঘুমায় নাই। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা আপনি ঘুমান নাই কেন। মা বললো
বাজান সবাইতো ঘুমাইতে ছিল তুই আসলে কে দরজা খুলে দিবে এই জন্য ঘুমাই নাই।
আমি শুধু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কি বলবো মাকে , যা হোক হোটেল
থেকে নাস্তা আর সাথে অনেক ফল ফুট কিনে বাসায় গেলাম। নাস্তা খাওয়ার জন্য
মায়ের সিটের নিচে থেকে প্লেট বের করে দেখলাম ভাত আর তরকারি। মাকে জিজ্ঞেস
করলাম প্লেটে খানা কেন? মা বলতে না বলতেই একজন বললো তোমার মা তো রাত্রে
খায়নাই, এত করে বললাম খাইল না। মায়ের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম
রাতে ভাত খান নাই কেন? মা বললো তোর জন্য খাই নাই। ঐ রাতে আসলে কই খানা
খাইতি তাই তোর জন্য রেখে দিছি। মা খানা না খেয়ে তার সন্তানের জন্য রেখে
দিয়েছে তার সন্তান এত রাতে এসে কোথায় খাবে। এই হলো মা, বন্ধুরা আমি আর
লিখতে পারবো না, আমার হাত আর চলে না, আমার চোখ অশ্রু সিক্ত। অনুরোধ রইলো
বন্ধুরা মাকে ভালোবাসো। মাকে কখনো কস্ট দিওনা। আমার মায়ের জন্য দোয়া করো
বন্ধুরা তিনি যেন অনেক দিন বেঁচে থাকে সুস্থ থাকে। আল্লাহ যেন আমাদের
সবাইকে মায়ের সেবা করার তৌফিক দান করে।
MA amar MA
ReplyDelete