পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগেই পাল্টে গেছে ভাংগা, শিবচর ও শরিয়তপুরের মানুষের জীবন যাত্রার মান। পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্ন, আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবের পথে। আজই ঘুরে আসলাম, পদ্মা নদীর ভিতরে প্রতিটি পিলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জানান দিচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। প্রকল্প ঘুরে দেখার সময় কথা হল বেশ কিছু শ্রমিকের সাথে। জিজ্ঞেস করছিলাম কেমন লাগছে এইখানে কাজ করতে? কয়েকজন শ্রমিক বলছিল পরিশ্রম অনেক বেশি কিন্তু সেই অনুযায়ী টাকা পাওয়া যায় না। তার পরও ভালো লাগছে এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজের অংশীদার হতে পেরে। কেউ একজন বললো এটাতো একটা ইতিহাস, আর আমি এখানে কাজ করে ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। কি চমৎকার কথা, টাকা যাই পাক পদ্মা সেতু কাজের অংশীদার হতে পেরেছে এটাই বড় প্রাপ্তি।
সবার চোখে মুখে হাসি আর আনন্দের ছাপ। সেতু প্রকল্প ঘিরে দুই পারের চিত্র যেন পাল্টে গেছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে এদিকে শরিয়তপুর অংশ থেকে শুরু করে শিবচর ভাংগা পর্যন্ত, অনেক উন্নয়ন স্থাপনা চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় কিছু লোকের সাথে কথা হলো, সবার চোখে মুখেই হাসি আর আনন্দের ছাপ। এরমধ্যে এই সেতু প্রকল্পের কারণে অনেকে বাবদাদার ভিটেমাটি খুইয়েছেন, তার পরও এতটুকু দুঃখ নেই। পদ্মা সেতু হচ্ছে এটাই বড় প্রাপ্তি।
চোখে পড়ার মতো যে সব স্থাপনা দেখলাম তাতে বুঝাই যায় বদলে যেতে শুরু করেছে সবকিছু। জীবন যাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এখান কার মানুষের। একজন জানালেন আমি ঢাকায় চাকরী করি, আমার বাড়িতে সব কিছু থাকা সত্বেও আমাকে বিশ হাজার টাকা বাসা ভাড়া করে ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকায় থাকতে হয়। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আর ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতে হবে না। বাড়িতে থেকে গিয়ে দিব্যি অফিস করতে পারবো।
পদ্মা সেতু এ যেন আর একটি মুক্তি যুদ্ধ। পদ্মা সেতু আমাদের ৭১। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরে গিয়েছিল পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে। এক অনিশ্চিতার মুখে পড়ে ছিল পদ্মা সেতু। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ যখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাংকের সিদ্ধান্তহীনতা অনেক ভাবিয়েছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে। ঠিক সেই রকম পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে আর একটি যুদ্ধের ঘোষণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন পদ্মা সেতু হবে। আমরা পদ্মা সেতু বানাবো তবে বিশ্ব ব্যাংকের টাকায় নয়। পদ্মা সেতু নির্মাণ করব আমাদের নিজেদের টাকায়। এ যেন আর একটি ৭ই মার্চের ভাষণ। গোটা বাংগালী জাতি আর একবার উজ্জিবিত হলো। সারা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল, কিভাবে সম্ভব? সমস্ত কিছু পিছনে ফেলে, বিশ্ব ব্যাংকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে, সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। পদ্মা সেতু আমাদের গৌরব। পদ্মা আমাদের অহংকার।
No comments