Header Ads

রোহিঙ্গা শরণার্থী ছোট্ট কিশোর।



"ছোট্ট কিশোর"

(সর্বহারা রোহিঙ্গা শরণার্থীর জীবন বাঁচানোরগল্প) 

 সৈয়দ জামাল হোসেন ।


চারিদিক মুহু মুহু গুলির শব্দ। 
ভাংগা বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখছিলাম, 
প্রতিবেশীর বাড়ি ঘর গুলোতে 
দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
চারদিক থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। 
মা আমাদের দুই ভাইকে 
বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন,
বাবা বাহিরের পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলেন।

কিছু বুঝে উঠার আগেই 
ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল
মায়ানমারের অত্যাচারি,
জালিম সেনা সদস্যরা।
সেনা সদস্যরা আমার বাবার দিকে
বন্দুক তাক করল।
আমার বাবার অসহায় আত্মসমর্পণ।
কিন্তু এতোও শেষ রক্ষা হল না, আমার বাবার।
কয়েক রাউন্ড গুলি
আমার বাবার বুকটা ঝাঁজরা করে দিল। 
সাথে সাথে আমার বাবা 
লুটিয়ে পরলো ঘরের মেঝেতে। 
আমার চোখের সামনে বাবার করুন মৃত্যু 

আমার বয়স আর কত হবে ৯ কিংবা ১০, 
আমার ছোট ভাইয়ের বয়স চার বছর। 
বাবাকে হত্যা করার পর 
জালিম সেনা সদস্যরা 
আমার মায়ের কাছে এলো, 
আমার মা আমাদের দুই ভাইকে 
বুকের সাথে চেপে ধরলেন।
মায়ানমারের জালিম সেন সদস্যরা 
আমার মায়ের বুক থেকে লাথি মেরে 
আমাদের দুই ভাইকে সরিয়ে
আমার মমতাময়ী মাকে টেনে হিছরে
নিয়ে গেলো ওরা। 
যাওয়ার সময় আমাদের ঘরে 
আগুন ধরিয়ে দিল। 

আমি দৌড় দিয়ে বাহিরে আসলাম, 
ঘরের ভিতর থেকে ছোট ভাইয়ের কান্নার শব্দ,
আমার বুকের ভেতরটা মোচর কেটে উঠল, 
আবার দৌড়ে ঘরের ভেতর থেকে 
আমার ছোট্ট ভাইকে কোলে করে 
বাহিরে নিয়ে আসলাম। 

চারদিক থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। 
দাউ দাউ করে জ্বলছে গ্রামের বাড়ি ঘর। 
কি করবো আমি? 
কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। 
হাজার হাজার মানুষ দিক বিদিক ছুটাছুটি। 
সবার সাথে আমিও আমার ছোট্ট ভাইকে 
কাঁধে নিয়ে ছুটলাম সবার পিছনে পিছনে। 

অবশেষে একটি জঙ্গলে এসে আশ্রয় নিলাম। 
সকাল হতে না হতেই সবার সাথে 
আমার ছোট্ট ভাইটিকে কোলে করে 
হাঁটতে থাকলাম এক অজানার উদ্দেশ্যে। 
সবার পিছনে পিছনে হাঁটছি তো হাঁটছি। 
উচ্চ নিতো পাহাড় জঙ্গল পার হতে লাগলাম। 
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আমি, 
আর পারছিনা। 

ছোট্ট ভাইটা খুদার জালায় চিৎকার করে। 
আমি কোথায় পাব খাবার। 
অনেকেই শুকনো খাবার নিয়ে এসেছে, 
যদি কাউকে খেতে দেখি,
হাত পাতি, আমার ছোট্ট ভাইয়ের জন্য। 
কেউ হয়তো দেয়, আবার কেউ দেয় না। 
এভাবে খেয়ে না খেয়ে, 
ছোট্ট ভাইকে কোলে করে, 
নয় দিন পর বাংলাদেশে এসে পৌঁছলাম। 

জানি না আমার মা কেমন আছে? 
মা আমি আমার ছোট্ট ভাইকে নিয়েছে 
নিয়ে নিরাপদ স্থান, বাংলাদেশে এসেছি। 
মা তুমি কেমন আছো? 
ওরা কি বাবার মতো তোমাকেও মেরে ফেলেছে? 




No comments

Powered by Blogger.